আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল পরিচয়ে প্যানেল জমা দিয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ভোট গ্রহণ চলবে। প্রায় এক হাজার ৪৭০ জন শিক্ষক ভোট দেবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এই নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল প্যানেল জমা দিয়েছে।

সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ভোট গ্রহণ চলবে। প্রায় এক হাজার ৪৭০ জন শিক্ষক ভোট দেবেন। কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন।

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন; টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসান, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবদুর রহমান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদা রশিদ, অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের অধ্যাপক নিসার হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রশীদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

নীল দলের প্যানেলে আরও আছেন- অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো. আকরাম হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবদুস ছামাদ, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম, রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ ওরফে সৌরভ সিকদার, আইন বিভাগের অধ্যাপক সীমা জামান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু৷

বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল

রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আশেকুল আলম রানা, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়ারুল কবীর, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম মোস্তাফিজুর রহমান, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম জাফরুল আযম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম শহিদুল ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম আরিফ মাহমুদ, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা আল মামুন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া, আইন বিভাগের অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ দাউদ খান, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল করিম, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন খান, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহ এমরান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজা আসাদ আল হুদা অনুপম, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমান এবং ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মুজতাবা রিজা আহমাদ।

বিতর্কে নীলদল

নীল দলের প্যানেলে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। বিতর্কিত একাধিক শিক্ষক মনোনয়ন পাওয়া এবং প্রভাবশালী কয়েকজন শিক্ষক বাদ পড়ায় শিক্ষকদের মাঝে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ কাজ করছে।

নীল দলের শিক্ষকরা বলছেন, সিনেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছেন এরকম অনেক শিক্ষক নীল দলে আছেন। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে এসব শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করে একটি শক্তিশালী প্যানেল দেয়া যেত।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম এ বিষয়ে বলেন, ‘প্যানেলে অনেক নাম এসেছে যাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে। অনেকে মন্তব্য করেছেন যৌন হয়রানির অভিযোগ এলেই কি ক্যান্ডিডেট হতে পারবে না? আমি বলি, অবশ্যই হতে পারবে না। কারণ কিছু না ঘটলে তো আর তারা অভিযোগ করতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দৈন্যদশা হয়নি যে অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্যানেলে দিতে হবে। এটি কাম্য ছিল না।’

জানা যায়, গত ১১ মে ৩৫ সদস্যের সিনেট প্যানেল ঘোষণা করে নীল দল। সেখানে মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএম আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুষদের তহবিল তছরুপের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা চলমান।

এছাড়াও প্যানেলের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তাদের একজন।

এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) নারী সহকর্মীদের হেনস্তা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে নিটারের ৩৭ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের এখনো কিনারা হয়নি।

অন্যদিকে প্যানেলে মনোনয়ন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে ২৬ এপ্রিল বিভাগেরই এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, তার ‘কুপ্রস্তাবে’ রাজি না হওয়ায় স্নাতক-স্নাতকোত্তরে প্রথম হয়েও শিক্ষক হিসেবে তিনি নিয়োগ পাননি। এমন অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর দুজন প্রভাষক নিয়োগে ওই বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের করা সুপারিশ স্থগিত করে সিন্ডিকেট। একইসঙ্গে অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকা এবং পিএইচডি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এছাড়া তিনি জালিয়াতি, প্রতারণা ও অনৈতিক উপায়ে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।

বিতর্কিতদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে তাকে বাদ দিয়ে আরও কয়েকজনকে নমিনেশন দেয়া যেত।’

জানা যায়, গত ১০ মে নীল দলের এক সভায় প্যানেলের প্রার্থী মনোনীত করা হয়। অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী, প্যানেল চূড়ান্ত করার আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থাকা নীল দলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের দেখানো হয়। কিন্তু এই প্যানেলের ব্যাপারে নীল দলের দু’বারের আহ্বায়ক ও বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘নীল দলের সভায় প্যানেল নিয়ে আলোচনা হয়েছে শুনেছি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলেরই নেয়ার কথা। আমরা তো এই দল থেকেই প্রশাসনে। বিষয়টি সবার সঙ্গে আলাপ করে নিলে আজ যে প্রশ্ন উঠছে সেটি হতো না। তখন এটি আমাদের জন্য সম্মানের হতো।’

সার্বিক বিষয়ে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘যেসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তা এখনো প্রমাণ হয়নি। প্যানেল মূলত দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হয়। এটা দলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। এই জায়গায় আমার এককভাবে কিছু করার নেই।’